আত্মার শুদ্ধতা দেহের শুদ্ধতার উপরে। আত্মশুদ্ধি সবচেয়ে বড় পবিত্রতা। এর চেয়ে সুন্দরতম জিনিস আর কিছুই হতে পারে না। আমরা নানা সময়, নানা প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে অশুদ্ধ কাজে লিপ্ত হই। আদতে অন্ধকারেই অশুদ্ধতার স্থান। নিজের মাঝে নিজেকে শুদ্ধ করার চেয়ে পবিত্র জিনিস আর কিছুই হতে পারেনা। নিজেই নিজেকে শুদ্ধ পথে নিয়ে যাওয়া মহান দায়িত্ব। এই দায়িত্ববোধ মানুষকে অনেক উপরে তোলে। মানুষের মনুষ্যত্বকে শুদ্ধ পথে নিয়ে চলে।
বলতে গেলে, আত্মশুদ্ধির পথে নিজেকে পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরি। আদতে আত্মশুদ্ধির পূর্ব শর্তই হচ্ছে নিজেকে পরিবর্তন করা। শুদ্ধ আত্মার নেতিবাচক পথে কোন পরিবর্তন নেই। শুদ্ধ আত্মা নিজেকে শুদ্ধতার পথে পরিচালিত করে। নিজের শুদ্ধতম দিককে জাগ্রত করে। নিজেকে শুদ্ধের পথে সব সময় অনুপ্রেরণা দেয়। মূলত, এই আত্মশুদ্ধিই অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি। যার শুদ্ধতা কিংবা পবিত্রতা সবার উপরে।
এখন আসি, দৈহিক শুদ্ধির ক্ষেত্রে। দৈহিক শুদ্ধি আর আত্মশুদ্ধি শুনতে কিছুটা সমান শোনা গেলেও এদের অভ্যন্তরে বিশাল তফাৎ। দৈহিক শুদ্ধি সবক্ষেত্রে ও সবসময় দেহকে শুদ্ধ রাখেনা। অনেকে চাপে পড়ে দৈহিক শুদ্ধিতে নেমে পড়ে। অন্যের ভালোতে নিজের দৈহিক শুদ্ধি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই দৈহিক শুদ্ধি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করে। বাহ্যিক শুদ্ধির চেয়ে অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি উত্তম। আত্মশুদ্ধি আর দৈহিক শুদ্ধির ক্ষেত্রে বিষয়টা একই। দৈহিক শুদ্ধি দেহকে অন্যের সামনে শুদ্ধ দেখালেও অভ্যন্তরীণ শুদ্ধি হয় না। অন্যদিকে আত্মশুদ্ধি আত্মার এবং দৈহিক উভয় ক্ষেত্রে নিজেকে শুদ্ধ রাখে। আত্মশুদ্ধিতে দেহ এবং আত্মা উভয়ই শুদ্ধ থাকে।
দৈহিক শুদ্ধির চেয়ে আত্মার শুদ্ধি বেশি পবিত্রতম। এই পবিত্রতায় মানুষের নিজের মধ্যে পুরোপুরি শুদ্ধি ঘটে। মানুষের এই শুদ্ধি মানুষকে মানুষ হওয়ার পথে পরিচালিত করে। দেহের মধ্যে যেমন বেশ কিছু ব্যাধির সংক্রমণ দেখা যায় ঠিক তেমনি আত্মার মধ্যেও। দেহের ব্যাধির মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশ, কফ ইত্যাদি ধরনের বিষয় লক্ষ্য করা যায়। দেহের ব্যাধির মধ্যে এর বাইরেও আরো অনেক ব্যাধি আছে। যেগুলো কিছু কিছু সময় স্থায়ী আবার অস্থায়ী। আত্মার ব্যাধির মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ, অহংকার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কারণ ছাড়াই অন্যের সাথে শত্রুতা, অন্যের ব্যাপারে কুধারণা, গীবত, শত্রুতা পোষণ এসবগুলোও আত্মার ব্যাধি। এসব ব্যাধি নিজেকে ছোট করে। নিজের প্রশস্ততার পথকে সংকীর্ণ করে। এসব সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে হলে অবশ্যই আত্মশুদ্ধির পথ বেছে নিতে হবে।
আত্মশুদ্ধি কিংবা আত্মসংশোধনের উপায় গুলোর মধ্যে ধৈর্য, বিশ্বাস, চারিত্রিক পরিবর্তন, সৎসঙ্গ, সঠিক কার্য পরিকল্পনা উল্লেখযোগ্য।
ধৈর্যঃ মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে শুদ্ধ আত্মাকে অশুদ্ধ করে। আর এই অশুদ্ধ আত্মাকে নিমিষেই শুদ্ধ আত্মায় পরিণত করা যায় না। সর্বোপরি প্রয়োজন ধৈর্যের। ধৈর্য আত্মশুদ্ধির বড় হাতিয়ার। আত্মশুদ্ধির পথে ধৈর্যের কোন বিকল্প নেই। সব মানুষ নিজেকে সঠিক পথে রাখতে পারে না। সঠিক পথে রাখার জন্য মানুষকে নিজের সাথে সংগ্রাম করতে হয়। আদতে এই সংগ্রাম করার ধৈর্য্য না থাকলে মানুষ কখনোই নিজেকে শুদ্ধ পথে রাখতে পারে না। আত্মশুদ্ধির মত এই পবিত্রতায় নিজেকে রাখতে হলে ধৈর্য ধারণ অত্যন্ত জরুরী।
বিশ্বাসঃ বিশ্বাসের ধন বড্ডই দামি। যার মনে বিশ্বাস নেই সে সব সময় অসুখী। বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসের মধ্যে তফাৎ হচ্ছে আত্মার তৃপ্তি। অবিশ্বাসীর আত্মায় তৃপ্তি নেই। অবিশ্বাস নিজেকে ভাঙতে থাকে। নিজেকে রাগ, ক্ষোভ, দুশ্চিন্তায় রাখে। অবিশ্বাসে আত্মার শুদ্ধতা নেই। আত্মার শুদ্ধতার জন্য নিজের মাঝে এবং নিজের স্রষ্টার মাঝে বিশ্বাস স্থাপন করার কোন বিকল্প নেই।
চারিত্রিক পরিবর্তন, সৎসঙ্গ এগুলো আত্মার সঠিক বিকাশ ঘটায় ও আত্মশুদ্ধির পথকে প্রশস্থ করে। আত্মাকে সব সময় পবিত্র রাখে। আত্মাকে শুদ্ধ রাখতে কেতাব অনুসরণ করাও জরুরী।
আত্মার শুদ্ধতা আত্মাকে সঠিক পথে জাগ্রত করে। আত্মার অক্ষমতা কিংবা অপূর্ণতার দিকে ঢেকে সঠিক পথ অনুসরণ করতে অনুপ্রেরণা দেয়। নিজেকে সব সময় পবিত্র রাখে। আত্মার শুদ্ধতা তথা আত্মশুদ্ধি এভাবেই সকল শুদ্ধতার উপরে। এর চেয়ে সুন্দরতম পবিত্র জিনিস আর কিছুই হতে পারে না।
১৩ জুন ২০২৩, কুড়িগ্রাম।