আমি আমারই পরিপূরক। ইহাতে কোন সন্দেহ নেই। পৃথিবীতে আমরা প্রত্যেকেই আমাদের প্রত্যেকের পরিপূরক। আমাদের সুখ, দুঃখ, আনন্দ, বেদনা সবকিছুর ভাগাভাগির দায়িত্ব আমাদের নিজেরই। অন্যদের নহে। তবে হ্যাঁ! অন্যরা এর কিছুটা প্রভাবক হতে পারে। তবে প্রভাবক হলেই যে ভাগীদার, এমনটা নহে। ইহাতে তাহার স্বার্থের কোন ব্যাঘাত ঘটিলে, সে কখনোই আপনার মাঝে আসিতে চাইবে না। ইহা না আসাটাও নিত্যান্ত স্বাভাবিক। পৃথিবী এ ভাবেই চলিছে, আর আপনিও বেঁচে আছেন ঠিক এভাবেই। শুরুতেই বলিয়াছি, আমি আমারই পরিপূরক। যাতে আসলেই আমার মাঝে কোন সন্দেহ নাই। সহজ উদাহরণ দিতে গেলে অনেক কিছুই বলিবার থাকে। আমাকে ভালো স্থানে পৌঁছানোর জন্য, আমাকেই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করিতে হয়। আমাকেই তখন কষ্ট দিতে হয়। আমাকেই তখন সুখের পথে স্বপ্ন দেখিতে হয়। কোন পথে এগোতে হবে তাহার সিদ্ধান্ত ঠিক নিজে নিজেই নিতে হয়। অন্যরা এতে কিছুটা সহযোগিতা করলেও, তাহারা কিছু কিছু সময় স্বার্থের বলে করিয়া থাকেন। কিছু কিছু সময় পথ প্রদর্শকও অর্থমূল্য চাহিয়া বসিয়া পড়েন। অর্থের বিনিময়ে দিকনির্দেশনা নেয়া আসল দিকনির্দেশনা নহে, ইহা নিতান্তই ব্যবসা এবং ইহা করেই তাহারা বাঁচিয়ে থাকে। আমারই দুখে কিংবা ক্রান্তিলগ্নে আমারি কার্য ছাড়া আমি কখনোই উত্তরণ হবার পথ খুঁজে পাই না। ইহা আমাকে যথেষ্ট শক্তি দেয়। ইহা থেকেই বাঁচবার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। পৃথিবীতে কোন কালেও আমার কেউ আপন না হলেও, আমার আপন সদা আমি। ইহা আমার কাছে যথেষ্ট শক্তির কারণ। প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব সত্তা তাহাকে পরিচালিত করে। যে মানুষের মানসিক সত্তা যত উন্নত, তাহার দৈহিক কার্যও ততো বেশি প্রসিদ্ধ। উন্নত মানসিক সত্তাই মানুষের দৈহিক মহৎ কাজের পরিপূরক। ইহা আমি সর্বদা বিশ্বাস করি এবং সেই পথে চলিবার জন্য সর্বদা নিজের পথ খুঁজে চলি।
আপনি বড় সমস্যায় পড়িয়াছেন। সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ না খুঁজিয়ে হাত গুটিয়ে বসিয়া আছেন। এতে আপনি কখনোই উত্তরণের পথ খুঁজিয়া পাইবেন না। উত্তরণের পথ খুঁজে পেতে আপনাকে অবশ্যই উত্তরণের পথের সন্ধান করিতে হইবে। ধরুন, আপনার যথেষ্ট সুখ। অর্থাৎ নিজেকে সুখী বলিয়া দাবি করা যাবে, এমন সুখ। আপনাকে আপনার সুখের পথে আনার জন্য দায়ী আপনার মহৎ কার্য। তাহা ছাড়াতো ইহা নিতান্তই হইতে পারে না। বলিতে গেলে, আপনি আপনার সুখের ভাগীদার। বিষয়টা ঠিক, দুঃখের ক্ষেত্রেও দাঁড়ায়। আদতে আমরাই আমাদের সুখ-শান্তি, হাসি-কান্না, দুঃখ-বেদনা ইত্যাদির পরিপূরক। পৃথিবীতে নিজেই নিজের উত্তরণের পথ খুঁজবার মতো মহৎ কাজ আর কিছুই নেই। ইহা কিছুটা স্বর্গীয় কাজের মতই। কেননা আপনাকে আপনার কার্য দিয়েই বিচার করা হইবে। সেই বিচারে উচিত জবাব দিতে যদি মহৎ কাজের পথ খুঁজে নেন, তাহলে সেটাই হবে আপনার স্বর্গে যাওয়ার সাথী। তাই মহৎ কাজে অর্থাৎ নিজেরে উত্তরণের পথ খোঁজা কিছুটা নিজের স্বর্গীয় কাজের মতই। আমরা কষ্ট পাই, ছোট হই, অপমানিত হই, পুরস্কার পাই, তিরস্কার পাই, ইহা সবকিছুই আমাদেরই কারণে। বলিতে গেলে, বাহ্যিক ক্ষেত্রে আমরাই আমাদের নিয়ন্ত্রক। তবে হ্যাঁ! নিয়ন্ত্রক বলিয়া ইহাতে আমি স্রষ্টাকে ছোট করছি নে। স্রষ্টার স্থান পৃথিবীর সবার ঊর্ধ্বে। ইহা মানিতেও আমি বাধ্য। মনে রাখবেন, নিজেই নিজেকে ছোট না করা পর্যন্ত অন্যরা কখনো আমাদেরকে ছোট করিবার সুযোগ হয় না। আদতে, আমাদেরকে ছোট করার চিন্তা তাহাদের মনেও আসিবে না যখন পর্যন্ত আমরা আমাদেরকে ছোট করি। মানুষকে ছোট চোখে দেখা সহজ কাজ নয়। ইহা নিতান্তই নিজের উপর ন্যস্ত থাকে।
সাধারণ আর অসাধারণ ইহার মাঝে কিছুটা তফাৎ আছে। ইহা মানুষের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য। মানুষ হিসেবে সবাই সাধারণ, ইহা সত্য। কিন্তু সৎ কিংবা অসৎ কাজে মানুষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাধারণের অসাধারণ হইয়া থাকে। মূলত ইহাতে তাহারা সবার দৃষ্টিতে পড়ে। তাহাদের ভালো কিংবা মন্দ কাজে তাহারা সবার মনে জায়গা করিয়া নেয়। মোবাইল ফোনের আবিষ্কারকের হাতে থাকা দামি মোবাইল ফোনটার দিকে কেউ নজর রাখিবে না। রাখিবে তাহার নিজের উপর, তাহার কার্যের উপর, তাহার উদ্ভাবনের কৌশলের উপর। কিন্তু সাধারণ একজন মানুষের হাতে থাকা দামি ফোনটার উপর সবার নজর থাকাটা স্বাভাবিক। ব্যক্তিটার উপর নয়। ইহা তো সবাই জানি যে, স্রষ্টা সবাইকে সমানভাবেই সৃষ্টি করিয়াছেন। ইহাতে কাহারও উপর সন্দেহ নাই। সন্দেহ থাকলে বুঝতে হইবে, আপনার স্রষ্টার উপর বিশ্বাস কিছুটা কম। স্রষ্টার সমান সৃষ্টিতে জগতে এসে অসাধারণ কিছু হওয়াটা কিছুটা কষ্টকর। ইহা অনেক বেশি কষ্টকর নয়, ঠিক সাধারণের কিছুটা বাইরে। ইহা ভালো-মন্দ উভয় ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভালো কাজ করিতে বিপুল সংখ্যক কষ্ট অতিক্রম করিতে হয়। ইহা সবাই জানি। ইহাকে নূতন করে বলিবার কিছুই নেই। মন্দের ক্ষেত্রেও ইহা সমান। আপনি হুট করিয়া কোন অপরাধ করিতে পারিবেন না। মানুষ হিসেবে একটু না একটু চিন্তায় পড়িবেন। চোর চুরি করার আগে অনেকবার চিন্তা করেন যে, চুরি করার পরে তার কি হবে, ধরা পড়িলে কোন অজুহাত দিতে হবে, চুরির শেষ প্রান্তে কোন পথে যাইতে হবে তাহাও একজন দায়িত্বশীল চোর চুরির আগেই চিন্তা করিয়া রাখেন। অসৎকার্যের দায়িত্বশীলরা পূর্ব চিন্তায় নিজের বাঁচবার পথ খুঁজে নেন। আপনি যখন কোন খারাপ কাজ করিতে যাইবেন, তখন প্রথমের কিছু সবাম ভাবিবেন কিংবা চিন্তাই পড়িবেন। আসলে, যেমনটা সবাই ভাবিয়া থাকে। কিন্তু পরে ভাবিবেন আমি তো অপরাধ করিবার জন্যই অপরাধ করিতেছি। তারপরে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে কাজটি সম্পন্ন করিবেন। এই সাধারণের অসাধারণ কাজটিও অনেক বড় অভিজ্ঞর কাছে কষ্টসাধ্য। একজন অভিজ্ঞ ফাঁকিবাজ ফাঁকি দিতেও কিছু কিছু সময় দ্বিধায় পড়ে যান। তাই বলিয়াছি, সাধারণের মাঝে কিছুটা অসাধারণ হওয়াও কষ্টকর।
সৎ ও অসৎ উভয় কার্যের অসাধারণদের পৃথিবী মনে রাখে ঠিকই। একজনকে স্বর্ণাক্ষরে আরেকজনকে ঘৃণায়। একজন সর্বদাই মানুষের আশীর্বাদে ভাসিয়া থাকেন, আরেকজনও ভাসিয়া থাকেন ঠিকই তবে আশীর্বাদে নয় বরং অভিশাপে। এই অভিশাপের অসাধারণ এর চেয়ে একজন নিতান্তই বোকা, সাধারণ মানুষের জীবন যাপন বেশ সমৃদ্ধ এবং ইহা স্রষ্টার কাছেও মহৎ পছন্দ।
পৃথিবীতে তিন উপায়ে মানুষ অন্যদের চেয়ে কিছুটা ব্যতিক্রম হয়। সৃষ্টি, আচরণ, কর্ম পরিধি। যার এগুলো যত সমৃদ্ধ, সে ইহজগতে ততই প্রসিদ্ধ। আমার দৃষ্টিতে এই তিনটি সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আর এই তিনটি মূলত প্রত্যেকের জন্য আমাদের নিজের দ্বারা পরিচালিত। মূলত এই তিনটির নিয়ন্ত্রক আমরা নিজেই। ইহ জগতে এই তিনটিকে অবশ্যই সমৃদ্ধ করিতে হয়। ইচ্ছে না করলেও ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েও করিতে হয়। তা না হলে কখনোই প্রসিদ্ধ হওয়া যায় না। এগুলো প্রসিদ্ধ হওয়ার পথ খুলে দেয়। ইহ জগতে মানুষ মানুষের আচরণ আর আশ্বাস দেখেই তাকে বিশ্বাস করে। চরিত্রের ক্ষেত্রে আচরণ আর আশ্বাস খুবই দামি। ইহা মানুষের উত্তরণের পথ প্রশস্থ করে।
নিজেই নিজেকে সবসময় দর্শক হিসেবে নয় বরঞ্চ কিছু কিছু সময় আয়োজক হিসাবে দেখাও জরুরী। যাতে অনেকাংশেই নিজের কৈফিয়ৎ পাওয়া যায়। একজন দায়িত্বশীল কখনো নিজেই নিজেকে ফাঁকি দেয় না এবং এটা দেয়ার কোন উপায় তার কাছে নেই। নিজেই নিজেকে ফাঁকি দেয়ার মত পৃথিবীতে কোন খারাপ কাজ নেই। আদতে ইহাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফাঁকি। শুরুতেই বলিয়াছিলাম, আমি আমার পরিপূরক। আদতে, আমরা প্রত্যেককেই প্রত্যেকের পরিপূরক। নিজেই নিজেকে ফাঁকি দিলে একসময় সে নিজেই ঘুরে নিজেকে ফাঁকি দেয়া শুরু করে। আমরা জীবনকে যা দেই, জীবন একসময় আমাদেরকে ঠিক সেরকম কিছুই দেয়। জীবন যখন আমাদের থেকে পরিপূরক কিছু পায়, একসময় জীবন আমাদেরকেও পরিপূরক কিছু দেয়া শুরু করে। জীবনের এই শুরুর কখনো শেষ নেই। জীবনের কাছ থেকে পরিপূরক কিছু পাওয়ার জন্য জীবনকে প্রস্তুত করতে হবে।
আমরা নিজেই নিজের পরিচালক। আমাদের মন আমাদের দেহের পরিপূরক। নিজের বাহ্যিক উন্নতির পাশাপাশি, নিজের সত্তার উন্নতি করিতে হইলে অবশ্যই নিজের সত্তার ইতিবাচক পরিবর্তন আনিতে হইবে। এই ইতিবাচক পরিবর্তন আমাদের নিজের দ্বারাই সম্ভব। কেননা ইহার নিয়ন্ত্রক আমরা নিজেই। নিয়ন্ত্রকের সঠিক নিয়ন্ত্রণে নিজেকে সু নিয়ন্ত্রিত করিতে না পারিলে সে ব্যর্থতা আমাদের নিজের। সে ব্যর্থতার দায় স্বয়ং আমাদেরকেই পরিশোধ করিতে হইবে। মনে রাখতে হইবে, আমাদের জীবনকে কিছু না দেয়া পর্যন্ত জীবন আমাদেরকে কিছুই দেয় না। তাই স্বপ্নের সুখ দেখিতে হলে, নিজেই নিজের পরিপূরক হয়ে নিজের কার্যগুলোর সঠিক পরিপূরণ করিতে হইবে। তাহা না হইলে আত্মার পরিতৃপ্তর মৃত্যু নিশ্চিত।
২৭.০৫.২০২৩, সকাল, জ.প্র.অ. কুড়িগ্রাম।