মানুষ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ভালো হবার উপায় খুঁজে। একটা সময় মানুষ তীব্রভাবে ভালো হবার পথে নিজেকে উত্তীর্ণ করে। পৃথিবীতে বাঁচতে ভালো হওয়ার উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী দিকটি হলো, পূর্বের অবস্থা থেকে নিজেকে পরিবর্তন করা। মানুষ নিজেকে পরিবর্তন করে তখনই, যখন তার চারপাশের সবকিছু তার কাছে পরিবর্তিত মনে হয়। মানুষ স্বভাবতই খাপ খাইয়ে নিতে পছন্দ করে। একটা সময় পরিবর্তনশীল সমাজে নিজেকে অপরিবর্তিত রেখে সমাজে টিকে থাকা তার পক্ষে যথেষ্ট কষ্টকর হয়ে ওঠে। এ কারণেই মানুষ স্বভাবতই তার চারপাশের সমান পরিবেশের সাথে নিজের পরিবর্তন করে। আদতে করতে চায়। একটু চিন্তার সাথে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে মানুষ বেশ কিছু ক্ষেত্রে নিজের পরিবর্তনটাকে যথেষ্ট ভাবে গ্রহণ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন একই সাথে পরিবর্ধন আনে। অর্থাৎ তার অতীতের সংকীর্ণ অবস্থা থেকে তার মুক্তি মিলে। আর এই পরিবর্তনের ফলেই তার অবস্থার পরিবর্ধিত রূপ চলে আসে।
এখন আসি পরিবর্তনের বিষয়ে। সময় পরিবর্তনশীল। সাথে মানুষও পরিবর্তনশীল। সময়ে সময়ে মানুষের পরিবর্তিত রূপ দেখা যায়। মানুষ তার পূর্বের অবস্থান থেকে নিজেকে পরিবর্তনে যথেষ্ট মরিয়া হয়ে ওঠে। কেননা মানুষের অতীত পথ সর্বদাই তার কাছে পরিচিত। কৌতুহল মনে নতুন পথের সবকিছু দেখার ইচ্ছে মানুষকে নতুন পথের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ধরুন, আপনি দীর্ঘদিন যাবত একটা জায়গায় প্রতিনিয়তই ঘুরতে বের হন। বেশ কিছু কাল পর দেখা যাবে সে জায়গাটি আপনার কাছে পরিচিত। আদতে অধিক পরিচিত। বহুবার সেখানে যাবার পর, একটা সময় সেখানে যাইতে আপনার খুব কম ইচ্ছে করবে। আপনি তখন নতুন পথের সন্ধান করা শুরু করবেন। ঠিক এভাবেই আপনি আপনার পূর্বের অবস্থান থেকে নিজের পরিবর্তন চাইবেন। আর এটাই আপনার পরিবর্তন, এটাই পরিবর্ধন। অর্থাৎ যত বেশি সময় যাইবে আপনি তত বেশি নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশ কিংবা নতুন কোন কিছুর সাথে মিশতে চাইবেন। নিজের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে মরিয়া হবেন। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। মানুষের যত বেশি সময় যায়, মানুষ তত বেশি নিজেকে সংকীর্ণ করে আনে, নিজের সুখ গুলোকে ছোট করতে থাকে, নিজের ইচ্ছে কিংবা সুখকে বিসর্জন দেয়া শুরু করে। আর ঠিক এভাবেই একটা সময় মানুষের সম্পূর্ণ পরিবর্তিত রূপ দেখা যায়।
শুরুতেই ভালো হবার উপায় এর কথা বলেছিলাম। মানুষ নিজের স্বার্থে নিজের পরিবর্তন ঘটায়। ভালো হবার উপায়টাও ঠিক একই। তা সম্পূর্ণ নিজের স্বার্থের উপর নির্ভরশীল। যেখানে যার স্বার্থ বেশি, সেখানেই তার বিস্তার বেশি। কেননা স্বার্থ মানুষকে সুযোগ দেয়। ভালো হবার স্বার্থটাও একই। নিজেকে ভালো রাখাই মূলত নিজের ভালো রাখার স্বার্থ। এর বাইরে নিজেকে ভালো রাখার স্বার্থ আর কিছুই নেই। আদতে স্বার্থের মধ্যে নিজেকে ভালো রাখার ইতিবাচক দিকই এটা। আমরা স্বার্থ বলতে সাধারণত নেতিবাচক দিকটাকেই বুঝি। কিন্তু নিজেকে ভালো রাখার স্বার্থে, নিজের ভালো কাজের পরিশ্রমটাকে মোটামুটি ইতিবাচক দিক বলা যেতে পারে। এই স্বার্থের নগদ নেতিবাচক কোন মূল্য নেই। এই স্বার্থ নিজের আমিত্বকে কখনো ধ্বংস করে না। ভালোর পথে নিজেকে রাখা কিংবা ভালোর পথে অগাধ পরিশ্রম করাটা কিছুটা স্বর্গীয় কাজের সমতুল্য। কেননা এ কাজ নিজের ইতিবাচক পরিবর্তনে যথেষ্ট সহযোগিতা করে। আসলে এই পরিবর্তনই তার পরিবর্ধিত রূপ। আর এই পরিবর্ধিত রূপটাই তার সকল সংকীর্ণতাকে বন্ধ করে। একসময় এই পরিবর্ধন মানুষকে ভালো হওয়ার পথে উত্তীর্ণ করে দেয়। ঠিক এভাবেই মানুষ ভালো হবার পথ খুঁজে পায়।
২২.০৮.২০২৩, কুড়িগ্রাম।