ব্যক্তিস্বাধীনতার ধারণা কতটুকু যৌক্তিক এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে স্বাধীনতা কি, তার উত্তর খোঁজা জরুরী। সাধারণভাবে ইচ্ছা অনুযায়ী স্বতঃস্ফূর্ত কোন কাজ করার ক্ষমতাই স্বাধীনতা। স্বাধীনতার ধারণা বহু ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাই প্রকৃত স্বাধীনতা। নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতা অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার উদ্ভাবক। এতে কোন সন্দেহ নেই। বিশৃঙ্খল সমাজে অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাই বিশৃঙ্খলার মুখ্য কারণ। অর্থাৎ স্বাধীনতা থেকে নিজেকে বাস্তুচ্যুত করার ক্ষমতাই স্বাধীনতা নয়। স্বাধীনতা তাই যা স্বাধীন সত্তাকে জাগ্রত করে।
এখন আসি ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রে। ব্যক্তিস্বাধীনতা ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত। ব্যক্তিস্বাধীনতা বলতে সাধারণত ব্যক্তিগত অধিকার ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাই বোঝানো হয়। তবে এ ধারণাতেই ব্যক্তি স্বাধীনতা যথেষ্ট নয়। মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি বাঁচার অধিকার, নিজস্ব সমর্থনের অধিকার, আইন ও গণতান্ত্রিক সাম্যের অধিকার, সংস্কৃতি চর্চার অধিকার, ধর্ম পালনের অধিকার সহ মৌলিক অধিকার পূরণের বিষয়গুলো ব্যক্তিস্বাধীনতা পূরণের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। ব্যক্তিস্বাধীনতা সাধারণত ব্যক্তি কেন্দ্রিক কিন্তু ব্যক্তিস্বাধীনতা জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের মুখ্য কারণ।
আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা ও দলগত কোন্দল ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। কিছু সমষ্টিগত দ্বন্দ্বে ব্যক্তিস্বাধীনতা নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রেই লক্ষণ করা যায়। স্বাধীনতা সার্বজনীনভাবে স্থান না পেলে সেটাকে স্বাধীনতা বলা যায় না। ঠিক ব্যক্তিস্বাধীনতার ক্ষেত্রেও তাই। স্বাধীন সমাজের সর্বজনীনতাই সর্বদা সমর্থিত। যে সমাজের অধিকার যতই সার্বজনীন, সে সমাজ ততই স্বাধীন। জাতীয় স্বাধীনতায় বিপ্লবের উদ্দেশ্য এবং সাম্যের লক্ষ্য থাকে। অন্যদিকে ব্যক্তিস্বাধীনতায় জাতীয় স্বাধীনতা স্বচ্ছ ও সম্মানীয় হতে থাকে। এতেই কোন সমাজ, দেশ বা জাতির স্বাধীনতার ধারণায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। অন্যদিকে ব্যক্তিস্বাধীনতাও সর্বজন সমর্থিত হয়ে সার্বজনীন ব্যক্তির কাছে সর্বজনীনতা লাভ করে।
০৮.০১.২০২৩, কুড়িগ্রাম।