কাজ করিতে গেলে সম্মতি প্রয়োজন। সম্মতি বিহীন কোন কার্য সম্পাদন হয় না। বাংলা অর্থে একজনের প্রস্তাব কিংবা মতের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করাই সম্মতি। সহজ ভাষায় বলিতে গেলে, অন্যের মতামতের সাথে একমত পোষণ করা। বাংলা সহজ কথায় আমরা একেই সম্মতি বলিয়া থাকি। এই সম্মতির মূল্য অনেক অনেক বেশি। কিন্তু ইহাকে অর্থ ব্যয়ে কিনিতে হয় না। ইহা আপনা আপনি মন থেকে বেরিয়ে আসে। হুটহাট কাজে সম্মতি গ্রহণ করা অনেকটাই নিজের বিপদ ডাকার মতই। মোট কথায়, হুটহাট সম্মতি গ্রহণ করা নিজের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে খারাপ হইয়া থাকে। যাহা পরে অর্থব্যয়েও ফিরিরে আসে না।
শিখিবার কাজে সম্মতি দেয়া অনেকাংশেই ভালো তবে সব শিখিবার কাজে সম্মতি দেয়া ভালো নয়। আমরা অনেকেই শিখিবার জন্য শেখার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে ইহজগতে শেখা খুব ভালো। যে অনেক ভালো শিখিতে পারে, অনেকেই আমরা তাকে শিক্ষিত বলিয়া থাকি। তাই বলিয়া শেখা বলেই যে সব সময় ভালো তা কিন্তু নহে। শিখিতে হইলে সৎকাজে শেখার মান অনেক বেশি দিতে হইবে এবং তাহা ভালো। কোন কিছু ভালোভাবে করিতে হইলেই তাহা শিখিতে হবে। প্রথমত সেটা শেখার জন্য সম্মতি প্রকাশ করিতে হইবে। তাহা না হইলে আমরা শিখিতে পারিব না। শুধু তাহা নহে, কোন কিছু করার পূর্বশর্ত হচ্ছে সম্মতি প্রকাশ করা। সম্মতি প্রকাশ না করিলে আমরা কোন কিছুই শিখিতে পারিনা। চুরি করিবার জন্য প্রথমে চুরি করা শিখিতে হইবে। তা না হইলে যে বড় সমস্যা আছে তাহা তো আমরা জানি। কিন্তু চুরি করার সম্মতি দান করিয়া চুরি করা শিখতে গেলে সে শেখা ভালোর পথে মোটেই অনর্থক। অর্থাৎ এ সমস্ত কাজ শিখবার জন্য মোটেই নিজের প্রতি সম্মতি দেয়া যাইবে না। যাহা মানবকল্যাণের পথে সদা ছুটে চলে ঠিক তাহার পথেই সম্মতি প্রদান করিতে হইবে।
আজকাল ইস্কুল-কলেজে নকল করার প্রথা বেশ দেখা যায়। একজন শিক্ষার্থী যখন নকল করিবার জন্য অন্য একজনের সহযোগিতা চায়, তখন পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের উদ্দেশ্যে অনেকেই তাহাতে সম্মতি প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে নকল করিলে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হবে ঠিকই। কিন্তু আমরা যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত হইতে পারিব না। তাই সব কাজে সম্মতি দেয়ার পূর্ব মুহূর্তে নিজেকে প্রশ্ন করে তার উত্তর বের করে সম্মতি প্রদান করুন। হ্যাঁ অথবা না। তাহা না হইলে আপনাদের সমস্যা যে হইবে, তাহা কিন্তু মোটের উপরই সত্য।
ইহকালে একটা সম্মতির মূল্য অনেক বেশি। একটা সম্মতির ফলে অনেক বড় বড় ভালো কাজ হইতে পারে অন্যদিকে একটা সম্মতির ফলে অধিক নিচু কাজ হয়েও যায়। এইটা হওয়াটা স্বাভাবিক। মহাবিশ্বে অদ্য অবধি যত ভালো কাজ হইয়াছে সকলেরই একটা চুক্তিপত্র ছিল। চুক্তিপত্রটাকেই সম্মতিপত্র বলা যেতে পারে। আমরা যে ইস্কুল-কলেজে শিখিবার জন্য যাই তাতে আমাদের ভর্তি পত্র পূরণ করিতে হয়। বলিতে গেলে, এই ভর্তিপত্রই সম্মতিপত্র। এই পত্রে একজন অভিভাবক তার সন্তানকে কিছু সৎ শিক্ষা গ্রহণের জন্য সম্মতি প্রদান করে স্বাক্ষর করিয়া দেন। অন্যদিকে সেই সৎ সম্মতির বরে শিক্ষার্থী শিখিতে থাকে।
আমি বারবার বলিয়া থাকি, একটা সম্মতির মূল্য অনেক বেশি। কোন কিছুতে সম্মতি প্রদান করিতে গেলে তাহার পূর্বে নিজেকে প্রশ্ন করিয়া উত্তর বের করুন। নিজের প্রশ্নে সৎ উত্তর পেলে তাহাতে সম্মতি প্রকাশ করিবেন। অন্যদিকে নিজের প্রশ্নে অসৎ উত্তর পেলে তাহার ধারে কাছেই যাবার চেষ্টা করিবেন না। সে পথে সাময়িক সিদ্ধির পথে গেলেও তাহার স্থায়িত্ব খুবই কম। সে পথ অনেকটাই সংকীর্ণ হইতে থাকে। অন্তে, সে পথে নিজের ভালো বলিয়া কিছুই থাকেনা। তাই সম্মতি প্রকাশ করিতে হইলে সৎস সম্মতি প্রকাশ করুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন। তাহার সৎ উত্তর খুঁজে বের করুন। তাহা না হইলে ভালোর পথে কভুই টিকে থাকিতে পারিবেন না। মনে রাখিবেন, সৎ সম্মতি সর্বদাই সিদ্ধি আনে।
২৮.০৩.২০২৩, জ.প্র.অ, কুড়িগ্রাম।