এক. শিক্ষা কি?
শিক্ষা কি? আমরা কেন শিখছি?
শিক্ষা সত্যি কি একটি জ্ঞান লাভের পদ্ধতিগত প্রক্রিয়া? নাকি এটি শুধু একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া? নাকি এটি মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশিত করার একটি মাধ্যম?
শিক্ষা নিয়ে কিছু বলতে গেলে সবার আগে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা জরুরী।
শিক্ষা বুদ্ধি ও নিজেকে জাগ্রত করার একটি প্রক্রিয়া, যা একজন শিক্ষার্থীর জ্ঞান, দক্ষতা ও আচরণগত দিকের ইতিবাচক পরিবর্তনে উপাদেয় মাধ্যম। আবার, শিক্ষা একটি সামাজিক প্রক্রিয়াও বটে। এ প্রক্রিয়া জীবনব্যাপী। শিক্ষার ব্যাপ্তি জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি। মানুষ প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শিখতে পারে এবং তার থেকেও অন্য কেউ শিখতে পারে। অর্থাৎ এটি নিজেকে গড়ে তোলার একটি অত্যাবশ্যক মাধ্যম। শিক্ষা মূলত, জ্ঞানলাভের পদ্ধতিগত আত্মিক সাধনের জীবনব্যাপী অনুশীলন, যা জ্ঞান, দক্ষতা, মান, বিশ্বাস ইত্যাদির দ্বারা অর্জনে সক্ষম।
আমরা মূলত শিখছি কেন?
অবশ্যই জ্ঞান লাভের আশায়। এই উত্তরে কোন দ্বিধা নেই। শেখার সীমা অপরিসীম। আমাদের সমাজে উদ্দেশ্যহীনতা সবচেয়ে বড় ত্রুটি। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য না জেনে শেখাটা, অর্থহীন শব্দ পড়ার চেয়েও নিচে। কেননা অর্থহীন শব্দ পড়লেও মুখের জড়তা কমে যায়। শিক্ষা আমাদের আমিত্বকে জাগ্রত করে। আমাদের আত্মিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করে। আমাদের ভেতরের সত্তাকে জাগ্রত করে পূর্ণবিকাশের পথ কে প্রশস্ত করে। শিক্ষার লক্ষ্য বহুমাত্রিক। আমরা সাধারণত পাশ করার জন্যই শিখি। পাস করার জন্য শিক্ষা প্রকৃত শিক্ষা নয়। এটা পার পাওয়া। মানুষ মিথ্যে বলে কিছু কিছু সময় পার হয়। ঠিক পাস করার জন্য শেখাটাও এরকম।
দুই. বিবেক কি?
আমার মতে, বিবেক হচ্ছে নিজের মাঝে তাৎক্ষণিক বিবেচনা মাধ্যম। বিবেক একটি আত্মিক বিচারিক মাধ্যমও বটে। এটি একটি জ্ঞানীয় প্রক্রিয়া, যা একজন মানুষের আত্মিক দার্শনিক গুণাবলীর দ্বারা পরিচালিত। যার বিবেক যত বেশি, সে তত বেশি জ্ঞানীয় বিত্তবান।
বিবেক মানবতার উন্নতি ও সমৃদ্ধির পথে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর স্তরগুলো মানুষের আত্মবুদ্ধি ও সুগভীর বিচারশীলতা উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। এটি নীতির স্তরকে প্রতিনিধিত্ব করে। এটি একজন মানুষের দার্শনিক মূল্যবোধ বাড়ায়। এক কথায়, বিবেক কোন ব্যক্তির দর্শন স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত একটি সংজ্ঞাবদ্ধ জ্ঞানীয় মাধ্যম, যা আত্মবুদ্ধি কিংবা সুগভীর বিচারশীলতার উপর ভিত্তি করে যুক্তিযুক্ত ও যথোপযুক্ত মাধ্যম প্রকাশ্যে সক্ষম।
তিন. পদ্ধতি কি?
আমার মতে, নির্দিষ্ট ক্রিয়া সম্পন্ন করার কৌশলকেই পদ্ধতি বলে। অর্থাৎ পদ্ধতি হচ্ছে একটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়, যা কার্যসম্পাদনের অন্যতম কলাকৌশল বা পন্থা। জ্ঞান অনুযায়ী পদ্ধতির পন্থা পরিলক্ষিত হয়। অর্থাৎ পদ্ধতি হচ্ছে একটি বিশেষ নিয়মতান্ত্রিক কৌশল যা নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত কর্ম সম্পাদনে চুক্তিবদ্ধ একটি প্রণালীগত প্রক্রিয়ার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
চার. সংস্কৃতি কি?
সংস্কৃতি হচ্ছে একটি বিশ্বাসগত ও পদ্ধতিগত প্রথা, যা ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনধারার রীতিগত অভ্যাস। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সংস্কৃতি তার জীবনধারার সাথে বিশেষভাবে প্রভাবিত। অন্যদিকে এটি তার নির্ণেয় বৈশিষ্ট্যও বটে। সংস্কৃতির সাথে আচরণ, রীতিনীতি, দৃষ্টিভঙ্গি, রুচিবোধ, শিল্পকলা, বিদ্যা, বিশ্বাস এই বিষয়গুলো ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। অর্থাৎ সংস্কৃতি হচ্ছে মর্ত্যের জীবনধারার একটি বিশ্বাসগত ও পদ্ধতিগত প্রথা, যা ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনধারার রীতিগত অভ্যাস ও জীবনধারার সাথে বিশেষভাবে প্রভাবিত একটি সংসর্গ মাধ্যম।
চলবে…
২৯.০২.২০২৪, কুড়িগ্রাম।