১। প্রথম কথা, শিখিবেন। জানার জন্য শিখিবেন। জানানোর জন্য শিখিবেন। ভালো কিছু শিখিতে পারিলে ভালো কিছুই আসিতে থাকিবে। মূলত, স্কুল জীবনই জ্ঞানের ভিত্তি শক্ত করিবার সময়। এ সময় আপনি যত বেশি শিখিতে পারিবেন, আপনার জ্ঞানের ভান্ডার তত বেশি শক্ত ও সমৃদ্ধ হইতে থাকিবে। আবারো বলিলাম, বেশি বেশি শিখিবেন। শেখার কাজে যত বেশি সময় দিবেন, তত বেশিই স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাবেন।
২। দক্ষতা অর্জন করিবেন। আজিকের এ সমাজ অদক্ষদের জন্য নহে। আপনি যাহা করিতে ভালোবাসেন, ঠিক তাহাই ভালো করিয়া করিতে থাকেন। প্রযুক্তির এ যুগে দক্ষ জনগোষ্ঠীই বড় সম্পদ। দক্ষ জনগোষ্ঠীর চেয়ে বড় ধন আজিকের দিনে খুব কম পাওয়া যায়। এ সময় থেকেই নিজেকে সম্পদে পরিণত করার পথে ছুটে চলিবেন। আত্মউন্নয়ন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন সহ যে সকল দক্ষতা বর্তমান সময়ে বেশি প্রয়োজনীয় ঠিক তাহা গ্রহণে নিজেকে আত্মনিয়োগ করিবেন। লেখালেখি, ছবি তোলা, বক্তৃতা, বিতর্ক, কমেডি, গান, নাচ, আবৃত্তি তথা শিল্প সাহিত্যে যে বিষয়ে পারদর্শী তাহা অনবরত চালিয়া যাইবেন। দেখিবেন ইহাতে আপনি একদিন প্রতিষ্ঠিত হইয়াছেন। আর হ্যাঁ! আপনার দুর্বলতার অংশগুলো আপনার সফলতার বড় কারণ হইতে পারে। ইহাতেও নজর রাখিবেন। দুর্বলতা মানেই সর্বদা দূরে সরে দেয়া নহে। নিজকে দুর্বলদের কাতারে রেখেও প্রতিষ্ঠিত করিতে পারিবেন।
৩। গুণাবলী অর্জনে আত্মনিয়োগ করিবেন। মানুষের দুঃখ-কষ্টে, রোগ-শোকে যথাসম্ভব পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টায় থাকিবেন। জীবন মানে শুধু পড়াশুনা অর্জন করা নহে। জীবনের পরিধি ব্যাপক ও বিস্তৃত। জীবনকে যত ব্যাপক কার্যে ব্যবহার করিতে পারিবেন, জীবনের অর্থবহ অর্থ তাহাতে তত অধিক বেগে আসিতে থাকিবে। জীবনের ব্যাপকতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টায় থাকিবেন।
৪। জাগিয়া স্বপ্ন দেখিবেন। স্বপ্নকে জীবিত রাখিবেন। জাগানো স্বপ্নে নিজের ইচ্ছের সাথে একমত পোষণ করিবেন। স্বপ্নকে বিশ্লেষণ করিবেন। যে স্বপ্ন দেখিতে জানে না সে মৃত মানুষ। বাঁচবার স্থানে মৃ*ত মানুষের তেমন কোন মূল্য নাই। তাই বাঁচিতে হলে বাঁচবার মূল্য দিয়েই বাঁচিতে হবে। ভালো ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখিলে তাহা শীঘ্রই বাস্তবায়ন করার পথ খুঁজিবেন। কখনো স্বপ্নকে অপেক্ষায় রাখিবেন না। স্বপ্ন বাস্তবায়নে পিতা-মাতা, শিক্ষাগুরুর যথাযথ সহযোগিতার সুযোগ নিবেন।
৫। স্বেচ্ছায় সেবা দেয়ার কার্যে নিজেকে যুক্ত রাখিবেন। এখন বলিতে পারেন, কোন কোন স্থানে স্বেচ্ছায় সেবা দেয়া যায়?
হ্যাঁ! আমি তাহা বলছি।
দক্ষতা উন্নয়নে।
অসহায়ের প্রয়োজনে।
স্কুলের ক্রিয়া প্রতিযোগিতায়।
ব্লাড ডোনেশনে।
বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে।
সৎ সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে।
অপরের সু-পরামর্শে।
স্বেচ্ছায় সেবা দেয়ার কার্যে অনেক কিছুই শেখা সম্ভব। শেখার ছলে অন্যের উপকারে আসা মহৎ কার্যের। গুণাবলী আত্মস্থে স্বেচ্ছায় সেবা দেয়া অনেকাংশই কাজে লাগে। তাই, ইহা এই সময় হইতেই চর্চা করিতে পারেন।
৬। গুরু ভক্তি করিবেন সবার আগে। আপনার অবস্থান সৃষ্টির জন্য গুরুদের ভূমিকা অভুলনীয়। আপনার এ জীবন আপনার বাবা মায়ের দেয়া উপহার। যাহার পক্ষ থেকে এ মহৎ উপহার তাহাকে যথেষ্ট সন্তুষ্ট রাখিবেন। পিতা মাতার পর আছে শিক্ষাগুরু। শিক্ষা গুরুর অবদান অনেকটা পিতা-মাতার অবদানের মতই। আপনাকে সঠিক মানুষ বানানোর পিছনে যিনি সর্বদাই সর্বত্র ছুঁটছেন, তিনি আপনার শিক্ষাগুরু। শিক্ষাগুরুকে যথাযথ ভক্তি করিবেন। গুরুদের আশীর্বাদ বাস্তবায়িত হয় অধিক বেগে। খেয়াল রাখিবেন, এই যে আপনি! এর পিছনে অবদান আপনার বাবা-মা, আপনার শিক্ষাগুরুর।
৭। কাউকে অনুকরণ করিতে যাইবেন না। আর্থিক ও সামাজিক অবস্থা সবার ক্ষেত্রেই সমান নহে। ইহাতে কেউ কেউ ঊর্ধ্বে আছেন আবার কেউ কেউ মধ্যে আছেন। অন্যের সাথে প্রতিযোগিতায় নিজের সুখকে কখনো হারাতে বসিবেন না। ইহা বসানোটাও অন্যায়। ইহা এই সময় থেকেই ত্যাগ করিতে পারিলে জীবনে অধিক উন্নতি করিতে পারার সক্ষমতা অর্জন করিবেন।
৮। প্রমাণ দেয়ার জেদ রাখিবেন। তবে ক্রোধ নয়। ক্রোধ আসিলেই আপনি নষ্ট হওয়ার পথে ধাবিত হবেন। সৎ কাজের জেদ মানুষকে সৎ করে তোলে। সৎকাজে জেদি হয়ে তাহা বাস্তবায়নে নামিয়া পড়িবেন। পাছে লোকের কথায় ভুলেও কান দিবেন না। তবে হ্যাঁ! পিতা-মাতা, শিক্ষাগুরু, অভিভাবক ইহাদের পাছে লোক ভাবা চরম অন্যায় ও পাপ।
৯। প্রশংসা করিবেন। এতে আপনিও প্রশংসিত হইবেন। প্রশংসিতদের প্রশংসা করা মহৎ কাজ। অন্যের ভালোতে কভুই নিজেকে ব্যর্থ মনে করিবেন না। ব্যর্থতা তখনই আসিবে, যখন আপনি ভাঙ্গিয়া পড়িবেন। আসলে ব্যর্থ বলিয়া নিজেকে ধিক্কার দেয়াও অন্যায়। ব্যর্থ হওয়া মানে পুনরায় নিজের জয়ের সুযোগ পাওয়া। সর্বোপরি, প্রশংসিতদের প্রশংসা করিবেন। তবে হ্যাঁ! সিদ্ধি হাসিলের জন্য তাহা নহে।
১০। অশ্লীল, অসত্য, ধর্মবিরুদ্ধ, গীবত, বিবাদ, পরনিন্দা, স্বার্থ সাধন, অসৎসঙ্গ, অনৈতিক সম্পর্ক, অপব্যবহার, নিন্দা, তিরস্কার একেবারেই পরিহার্য। ইহাতে শুধু নিন্দায় ভাসিবেন।
১১। নিজেকে বড় মনে করিতে গেলে বড় তো হবেনই না, বরঞ্চ ছোট হইবেন। মনে রাখিবেন, আপনি আপনাকে আপনার কাজে ছোট না করা পর্যন্ত মানুষজন আপনাকে ছোট করিতে পারিবে না। ছোট করার সাহসটুকু পর্যন্ত পাইবে না।
১২। নিয়মিত হইবেন এবং চেষ্টার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চটুকু চেষ্টা করিবেন। কোন কাজ করিতে হইলে তাহা সর্বোচ্চটুকু দিয়ে করিতে হইবে। সেটা ফাঁকি দেয়ার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কোন কাজে ফাঁকি দিতে হইলে তাহাতেও সর্বোচ্চটুকু ফাঁকি দিতে হইবে। সফল হওয়ার সূত্রই এটি যে, সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করা। মনে রাখিবেন, আপনি যখন সর্বোচ্চটুকু চেষ্টায় কাজ করিবেন আপনি তখনই সফল হইবেন।
৩০.০৪.২০২৩, বিকাল, জ.প্র.অ. কুড়িগ্রাম।