চরিত্র ব্যক্তির নির্ণায়ক। অর্থাৎ মানুষের চরিত্রই তার স্বতন্ত্র নির্ণায়কের মূল বৈশিষ্ট্য। এই চরিত্র মানুষ নিজেই অর্জন করে। যার চরিত্র যতই সুন্দর সে তত বেশি ইতিবাচক পথে সমৃদ্ধ। চরিত্র জীবনচর্যায় নীতি ও সমৃদ্ধির পথে ইতিবাচক পরিবর্তনের মূল। সহজ কথায় বলতে গেলে, চরিত্র একজন মানুষ বা জীবের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ক মূল, যা মানুষের সামগ্রিক বৈশিষ্ট্য ও জীবনধারাকে প্রকাশ করে। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটা বিষয় লক্ষণীয়। আমাদের সমাজে সবার চারিত্রিক ধারা সমান নয়। আবার অনেকেই ভিন্ন ভিন্ন চারিত্রিক রীতি অনুসরণ করেন। এতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় বিষয়গুলো লক্ষ্যণীয়। প্রত্যেক ধর্মে চরিত্র সম্পর্কে বিস্তার বর্ণনা ও গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।
বিস্তার আলোচনা ও বোঝার ক্ষেত্রে আমরা চরিত্রকে দুইটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
১. সচ্চরিত্র
২. অসচ্চরিত্র
সচ্চরিত্র ও অসচ্চরিত্রের পাশাপাশি দ্বিমুখী চরিত্রের মানুষ কিংবা জীব লক্ষণীয়। তবে সব ক্ষেত্রেই সচ্চরিত্রের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। কেননা সচ্চরিত্রবান মানুষ কিংবা জীব সব সময়ই উত্তম। সচ্চরিত্রের চেয়ে মহৎ কিছুই নেই। এটা সার্বজনীন সত্য। সচ্চরিত্রের তালিকা বিস্তার ও ব্যাপক। বুঝতে গেলে, যে কাজে মানুষজনের মঙ্গল, স্রষ্টার সন্তুষ্টি সে কাজই সচ্চরিত্রের। ইসলাম ধর্মে মহানবী (সাঃ) এর সচ্চরিত্রের কারণে তিনি বিধর্মীদের কাছেও সম্মানিত ছিলেন।
আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সাঃ) এর উত্তম চরিত্রের প্রশংসাও করেছেন, তিনি বলেন, ‘আপনি মহান চরিত্রের ওপর প্রতিষ্ঠিত’। (সুরা কলম : ৪)
সচ্চরিত্র মানুষের অর্জিত শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সচ্চরিত্রের মূল উদ্দেশ্যই সৎ ও ন্যায়বান মানুষ সৃষ্টি করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সার্বিক উন্নতি সাধন এবং নীতিবোধ প্রতিষ্ঠা করা।
রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইসলামের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো লোক ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।’ (মুসনাদে আহমদ : ২০৮৬৩, মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি : ২০৭২, মুসনাদে আবু ইয়ালা : ৭৪৬৮)।
আরেক হাদিসে বর্ণিত আছে,
রাসুল (সা.) বলেন, ‘মোমিন বান্দা উত্তম চরিত্রের মাধ্যমে ওই ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যে দিনে রোজা রাখে এবং রাতে নামাজে দাঁড়ায়।’ (সুনানে আবি দাউদ : ৪৭৯৮, মুসনাদে আহমদ : ২৫০১৩, সহিহ ইবনে হিব্বান : ৪৮০)।
সচ্চরিত্রের চেয়ে বড় মর্যাদা পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। সচ্চরিত্র জীবন পরিচালনার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সচ্চরিত্র ইহজনম ও পরজনমের মুক্তির অন্যতম পন্থা। সচ্চরিত্রতায় শুদ্ধির পথে স্থান অনিবার্য। সচ্চরিত্রের গুন নেকির পাল্লাকে ভারী করে। সচ্চরিত্র ব্যক্তি শুদ্ধতার উল্লেখযোগ্য অতি অন্যতম পন্থা।
এ প্রসঙ্গে রসূল বলেন, ‘কিয়ামতের মাঠে হিসেব-নিকাশের সময় ’আল্লাহ ভীতি ও চরিত্রতার গুণ’ মু’মিনের আমলনামাকে ভারী করবে।’
রাসূল (সাঃ) আরোও বলেন, ‘কিয়ামতের দিবস তোমাদের মধ্যে আমার নিকট বেশি পছন্দনীয় ও অবস্থানের ক্ষেত্রে অধিক নিকটবর্তী হবে তোমাদের মধ্যে যে উত্তম চরিত্রের অধিকারী’। সৎ চরিত্রের অধিকারীর আমলনামাও ভারী হবে।
অন্যদিকে অসচ্চরিত্র ব্যক্তি ধ্বংসের মূল কারণ। অহংকার, পরনিন্দা, অপচয়, লোভ, মিথ্যা, গীবত এগুলো অসচ্চরিত্র ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য। সত্যিকারের মুমিন হবার পথে এগুলো বড় বাধা।
মহানবি (সাঃ) বলেন, “সত্যিকার মুমিন তারাই, যাদের চরিত্র সুন্দর।”
দ্বিমুখী চরিত্রের মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর। শুদ্ধের স্থানে দ্বিমুখী নীতির কোন স্থান নেই। দ্বিমুখী নীতির ফলেই সমাজ সবচেয়ে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
দ্বিমুখী নীতির চরিত্র নিয়ে আল্লাহ তাআলা সূরা আল মাআরিজ এ বলেন,
وَّاِذَا مَسَّہُ الۡخَیۡرُ مَنُوۡعًا ۙ
অর্থঃ
আর যখন তার স্বাচ্ছন্দ্য আসে, তখন হয় অতি কৃপণ। (সূরা আল মাআরিজ, আয়াত নং – ২১ )
দ্বিমুখী চরিত্রের ব্যক্তিরা সর্বদাই যে কোন পক্ষের কাছে মিথ্যাবাদী। তাদের মুখে এক এবং অন্তরে আরেক থাকে। আদতে মানব সমাজে এদের অবস্থান অধিক নিচে।
আকৃতিগত দিক থেকে মানুষ সমান হলেও চারিত্রিক দিক থেকে প্রত্যেককেই ভিন্ন। মোটকথা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই ব্যবহারিক দিক থেকে প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেক মানুষ থেকে আলাদা। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যে শুধু মানুষের বাহ্যিক আচরণ প্রকাশের উপদেয় মাধ্যম তা নয়, এটি মানুষের অভ্যন্তরীণ আচরণ গঠনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। চরিত্রবান মানুষের ব্যবহার পরিপূর্ণ ব্যবহারিক গুণসম্পন্ন। এক্ষেত্রে সচ্চরিত্র ভালোর পথে অধিক হারে লক্ষণীয়। সচ্চরিত্রের মূলে দায়িত্ববোধ, সততা, স্বচ্ছতার পাশাপাশি নৈতিকতা সর্বোৎকৃষ্ট লক্ষণীয়। ব্যক্তির সচ্চরিত্র তার ন্যায়বোধ, ধর্মপরায়ণ ও আদর্শবান হবার প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। সর্বোপরি যে পথে সচ্চরিত্রের উদ্ভব, সে পথেই প্রত্যেক ব্যক্তির সার্বিক উন্নতি সাধন ও নীতিবোধ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত রূপ।
১৫ মার্চ ২০২৪, মালিপাড়া।