: সুমন…
: হ্যাঁ! কে?
: জয়লতা।
: জয়লতা…! ও…হ্যাঁ! কেমন আছো?
: এইতো। বেঁচে আছি কোনরকম। তোমার কি খবর?
: কোনরকম কেন? বাঁচার কথা তো ভালোভাবেই।
: তবুও রে, ভালো নেই। তোমার কি খবর এখন?
: আমার আর কি রকম খবর। এইতো ভালো আছি।
: তো চাকরি-বাকরি পেলে?
: চাকরি! হা হা হা…। আমাদের আবার চাকরি আছে নাকি? বেকার থাকাই তো আমাদের চাকরি!
: তুমি এখনো আগের মতই আছো দেখছি। আচ্ছা, একটু ভালো করে কথা বলতে জানো না? নাকি জানো কিন্তু বলো না?
: জানলাম আর কই। বেকারদের মুখে ভালো কথা মানায় না। জানোই না তা? যার কেউ নাই তার মুখে ভালো কথা অনর্থক। বুঝছো?
: তোমার মন খারাপ?
: আরে না! মন খারাপ হতে যাবে কেন? আমি তো নিজে খারাপ। অযথা মনকে দোষারোপ করব কেন! দেখতো…
: আচ্ছা, তুমি সহজ করে কথা বলতে পারো না? তোমার এই আগের অভ্যাস এখনো আছে। আর এই অভ্যাস কখনো শেষ হবেও না। আমি জানি সেটা।
: হা হা হা…জানো না, সহজ কথা যায়না বলার সহজে।
: ঢং করো না।
: ঢং আর করলাম কই।
: শোনো, আমাকে কিন্তু এড়িয়ে যাচ্ছো?
: কি এড়িয়ে গেলাম?
: বললাম যে, চাকরি-বাকরি পেলে?
: বললামই তো! বেঁচে থাকাই চাকরি।
: থাক! আর বলা লাগবে না।
: হুমমম।
: বিয়ে-শাদী করলে?
: না।
: বয়স তো দিন দিন শূন্যের কোটায় আসছে! বিয়ে করার বয়স তো দিন দিন কমে আসছে!
তো, বিয়ে-শাদী করে ফেলো! আচ্ছা শুনছি, সিগারেট ধরছো নাকি ইদানিং?
: শুনছি যখন। তাহলে তো ওটাই।
: কিসের জন্য সিগারেট ধরছো? যে কারণটা শুনলাম ওই কারণেই নাকি!
: কি কারণ শুনলে? কার কাছে শুনলে?
: তুমিই ভালো জানো। আচ্ছা, এত কষ্ট পাওয়ার কি আছে বলতো। জীবন তো একটাই। অতএব, সুখে থাকার চেষ্টা করো।
: মানুষ চাইলেও তো আর সুখে থাকতে পারেনা।
: সুপুরুষরা কখনো সিগারেট নেয় না। আর বলো? তোমার কিসের এত কষ্ট? কিসের অভিমান? অকালে সিগারেট নিয়ে খামাখা বুড়ো হয়ে যাচ্ছ দিন দিন।
: সুপুরুষই যদি তাহলে ছেড়ে গেলে কেন?
: হা হা হা…। ছেড়ে আর গেলাম কই। এইতো কথা বলছি।
: নতুন মানুষটা তোমাকে খুব আদরে রেখেছে,তাই না?
: আগে বলো, সিগারেট ধরছো কেন? গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট করে চাকরি-বাকরির দিকে একটু যাও। এসব ছাঁই-ভস্ম খেয়ে কিছুই হবে না। পাগলরা এসব ছাঁই-ভস্ম খেয়ে বাঁচে।
: নতুন মানুষের কথা জানতে চেয়েছিলাম।
: কি দরকার ওসব জানা?
: মানুষের শান্তিটুকু কায়েম করা উত্তম। বলে ফেলো?
: আমাকে কেউ আদরে রাখুক না রাখুক, আমি ভালো থাকি না থাকি, ওসব পরে! আমি বলছি, গ্রাজুয়েশনটা কমপ্লিট কর। ওসব সিগারেট, ছাঁই-ভস্ম বাদ দাও। আচ্ছা, সিগারেট কি দেয় তোমায়? শান্তি দেয়, সুখ দেয়? তোমার টাকা অনেক বেশি এখন। আগে তো অনেক কিপটামি করতে। মানুষ পাল্টায় এভাবেই! হুমম…
: আসলেই! বেকার থাকার কারণে একজন অপরের কাছ থেকে চলে যায়। মানুষ এভাবেও পাল্টায়, তা জানো? তোমার তো শান্তি। এখন আর নিয়ম করে কাউকে ভালো রাখার দায়বদ্ধ নেই।
: হা হা হা…। শান্তিই তো। অপার শান্তি। বিয়েটা করে ফেলো। শান্তি ভালোভাবে বুঝে ফেলবা।
: ঠিক যেমনটা তুমি শান্তিতে আছো। আমার এতেই হবে। ফেসবুকে নতুন মানুষটাকে নিয়ে ছবি দিচ্ছো সুন্দর সুন্দর। সবই দেখি! আচ্ছা, তোমার মানুষটাকে আমার কাছে বলছো কখনো?
: হা হা হা…। বলছি রে। বহুবার বলছি
: তুমি এখন অনেক সুখে! তাই না? এত সুখ কি করো?
: খাই, মাথায় দেই!
: ঢং করছো!
: হা হা হা…। ঢং আর করলাম কই! আমার তো অনেক সুখ, অপার সুখ। এই সুখগুলো কি করব। নিয়ম করে তিন বেলা খাই। মাথায় দেই।
: দেখতে দেখতে তুমি বড় হয়ে গেলে! কি মাথায় বুদ্ধি তোমার। তাই না?
: জানি না রে প্রিয়তম।
: প্রিয়তম! হা হা..। হাসি পেল!
: আমি কারো প্রিয়তম নই।
: তা, কেন নও একটু শুনতে পারি?
: তোমার আবার শুনবার সময় আছে নাকি। তুমি তো অনেক ব্যস্ত। মহা ব্যস্ত। আমার জন্য সময়টুকু আগে তো ছিল না কখনোই। একটু সময় চাইলে কত কি বলো! কত কি লিখ! ..মনে নেই?
: তোমার সবই মনে আছে। তোমার ওসব মনে থাকলেই ভালো।
: হুমম।
: হা হা হা…। মিথ্যুক একটা।
: প্রতারক একটা।
: আচ্ছা, এখনো কবিতা লেখ?
: কাকে নিয়ে লিখব, বলো?
: কেন! আজকাল কি কবিতার ভাবের অভাব নাকি? ক’জন কবি কবিতার ভাবের অভাবে ভোগে?
: হা হা হা…! বহুজন। আমি তো কবি নই। শুধুমাত্র ভাব লিপিবদ্ধ করিই মাত্র।
: আচ্ছা, আমার নম্বর চিনলে কিভাবে?
: চলে গেছো জন্যই কি চিনবো না?
: এইতো, সহজ কথা সহজ ভাবে বলতেছো না। নাকি শুধু আমার সাথেই এরকম করো?
: তোমার সাথে কেন এরকম করতে যাব? প্রিয়তমা। প্রিয়তমা বললাম.. হাসি পেল? আসলে হেসে নাও। হাসলে শরীর ভালো থাকে।
: না হেসে আর যাব কই, বলো?
: তোমার নতুন মানুষের কাছে। হা হা..
: আহঃ বাদ দাও তো সব!
: তোমাকে এখন আর মনে করি না।
: হুমম।
: কি বললে?
: না না। কিছু না। আমিও জানি, আমাকে এখন মনে করো না। কিন্তু ওসব ছাঁই-ভস্মে উড়ো। ও হ্যাঁ! পারলে সিগারেট ছাড়িও!
: ধুউর! আমি অন্যের পয়সায় সিগারেট খাই।
: অন্যের পয়সার সিগারেট হলেও ক্ষতিটা কি অন্যের হচ্ছে?
: মানসিক নয় বরং আর্থিক।
: তোমার সাথে তর্কে পারবো না।
: হুমম। তর্ক করলাম কই।
: কি আর বলি রে! নিজের ভালো দেখো। চাকরি-বাকরি একটা নিয়েই নিও।
: কবিতা শুনো এখন? বড়লোকদের তো কবিতা শুনতে নেই। নাকি সেজন্যই শুনোনা?
: শুনিই তো রে। কবিতা আর না শুনে যাই কোথায়!
: আমাদের সম্পর্কটা কবিতার মত সত্য ছিল, তাই না? কিন্তু কবিরা তো সত্যদ্রষ্টা হয় না। তাই, আমরাও সত্যদ্রষ্টা ছিলাম না।
: ওভাবে বলতে নেই। একটাই জীবন। জীবনে কেউ না কেউ তো আসেই।
: তুমি তো অনেক ভালো বুঝো এখন। আমাদের সব স্মৃতি গুলো মনে আছে তোমার?
: সারমর্ম মনে আছে।
: হুমম। মনে থাকবে না তো। তোমার মনে রাখার এখন কত জিনিস।
: বুঝলাম। নতুন মানুষ এল তাহলে?
: আমার কাছে আর নতুন কেউ আছে নাকি। তুমিই তো নতুন সব সময়। সেদিন পরিস্থিতির অবাধ্য হতে পারলে না। এখন এইভাবে ভালো আছি যে, তুমি ভালো আছো।
: দুঃখিত সুমন। ভুলটা আমারই ছিল।
: আরে না! ভুল কেন। ভুল তো আমি করেছি।
: কি আর! ভুলই জীবন আমাদের।
: হুমম। আচ্ছা মাঝে মাঝে স্মরণ করিও।
: নিয়মিত লিখ এখনো?
: না লিখে আর কোথায় যাই বলো। ঘুমাবো। কাল ভোরে লিখতে বসবো।
: আচ্ছা! নতুন লেখা আমাকে পাঠিও।
: হুমম। শুভরাত্রি।
: হুমম। ভালো থেকো।
: তুমি বলেছ যখন, ভালো না থেকে আর কই যাব। ভালো তো থাকতেই হবে। তুমিও ভালো থেকো।
: শুভ রাত্রি।
-কল এন্ডেড
০৩.০৪.২০২৩, ভোর, জ.প্র.অ, কুড়িগ্রাম।