: এই যে শুনছেন?
: শুনবো নাই বা কেন, বলুন? আপনি যখন বলছেন তখন তো শুনবোই।
: আপনি কে?
: এ কি প্রশ্ন! নতুন করে বলার কি আছে, আমি কে। রক্ত মাংসে গড়া তাজা মানুষ আপনার সামনে বসে। তাও বলছেন আপনি কে? আচ্ছা, লাস্ট কবে আপনি আপনার চোখের পাওয়ার টা চেক করছেন, বলুন তো?
: আমি আপনার পরিচয় জানতে চেয়েছি।
: ও হ্যাঁ! তাই বলুন। আমি আর কি কে যে কি বলি! আমি রমেশ। কোর্টে কাজ করি।
: কোর্টে? ও.! তাই বুঝি?
: কিছু বললেন?
: না। মানে আপনি অনেকক্ষণ আমার দিকে চেয়ে আছেন, তাই বললাম আরকি, আমাকে কখনো দেখেছেন কিনা কিংবা কিছু বলতে চান কিনা! সে কারণেই জিজ্ঞেস করা।
: আরে না না। আমার মনে কিছু নিয়ে আর তেমন জায়গা নেই। আমার মন সম্পূর্ণ অন্য কিছুতে ব্লক। বাই দ্যা ওয়ে, আপনি নিজের প্রতি খুব কেয়ারফুল, তাই না?
: একদমই না।
: এ কি! অন্য কেউ আপনার দিকে তাকালেই, ফের প্রশ্ন করেন কিছু বলবেন কিনা? আবার বলছেন যে, একদমই না। আসলে কেয়ারফুল বিষয়টা কি জানেন? ব্যক্তিগত মূল্যায়নের যথাযথ প্রয়োগ বিষয়টাই কেয়ারফুল। আমি আপনাকে দেখে তা…
:আপনার সাথে কথা বলে কেমন বিদ্যার্থী হয়ে গেলাম। বলুন? (তৎক্ষণাৎ)
: আমাকে সে কারণে অনেকে পন্ডিত বলে ডাকে।
: পন্ডিত! (রাগান্বিত হয়ে) (ইডিয়েট কোথাকার)
: আসলে আমি ছোটবেলায় অনেক বই টই পড়তাম। আবার একসময় সংস্কৃত কলেজে পড়ার ইচ্ছা জাগল। কিন্তু সংস্কৃত কলেজে পড়ে কি আর হবে, বলুন? বাংলাটাই তো ঠিকঠাক মুখে আসে না। আবার সংস্কৃত বুঝবো কি? আসলে বিষয়টা কি জানেন, আমার সে সময় পাইলট হওয়ার ইচ্ছে ছিল!
: তো হলেন না কেন?
: আমার মায়ের ইচ্ছে ছিল আমি ডাক্তার হব। কিন্তু আমি রক্ত দেখেই ভয় পেতাম। ইনজেকশন, গজ, ব্যান্ডেজ এগুলোতে আমার যমের ভয় ছিল। ছোটবেলায় একসময় গাছ থেকে পড়ে গেছি। ডাক্তারবাবুর দুইটা ইনজেকশনে বাড়ি ছেড়ে ভয়ে পালিয়েছিলাম। শেষমেষ সেই ইচ্ছাটাও ছাঁই।
: আপনার কথাবার্তা দেখে তো বোঝা যায় না, আপনি ভীরু স্বভাবের।
: না মানে, ভয়টয় ওসব আমার নেই বললেই চলে। বড় ডাকাত দলের সাথে যদি যুদ্ধ ঘোষণা হতো, তা একায় আমি ঠিকঠাক দিব্যিই সামলিয়ে নিতাম।
: আপনি তো ভালই কথা বলতে পারেন। এত কিছু সত্ত্বেও আপনি কোর্টে কাজ করেন কেন?
: ওই বললেন, আপনি অনেক ভালো কথা বলতে পারেন। আজ্ঞে এ কারণটাও ছিল। আমি ছোটবেলায় খুব ভালো বিতার্কিক ছিলাম। স্কুলের ফার্স্ট প্রাইজটা আমার জন্য থাকতই সব সময়। আবার একসময় ব্যারিস্টার হওয়ার ইচ্ছাও ছিল। আমি তখন নিজেকে…
: আচ্ছা ভাই, আপনাকে তো অনেকেই অনেক কিছু হতে বলে। বাই দ্যা ওয়ে, আপনি অনেক বাচাল।
: আজ্ঞে, আপনি বিরক্ত হচ্ছেন?
: না।
: বিরক্ত না হলে বাচাল বলবেন কেন, বলুন?
: যে বেশি কথা বলে, সে বাচাল বাচাল বাচাল।
: এ কি! যে বেশি কথা বলে সে বাচাল। আপনি তাও বাচাল বলার পরও দুবার অধিক বললেন। বাচাল! বাচাল! বাচাল! আপনিও তো একবারের জায়গায় দুবার অধিক করে বলেন। তার মানে আপনিও আমার মত বাচাল। কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
০৪.০১.২০২৪, কুড়িগ্রাম।