একটা সময় পহেলা জানুয়ারি মানেই নতুন বই এরকম কিছু বুঝতাম। বছরের শুরুর দিন বিদ্যালয় থেকে বই নেয়ার আনন্দ যেন স্বর্গের শ্রেষ্ঠ আনন্দের সমতুল্য। নতুন বইয়ের ঘ্রানে নতুন বছরের পড়াশুনায় একটা নতুন উদ্যম চলে আসে, ঠিক এরকম একটা ব্যাপার।
স্কুল থেকে নতুন বই এনেই পৃষ্ঠা উল্টিয়ে শুধু পৃষ্ঠার ছবিগুলো দেখতাম কয়েকবার করে। তখন পৃষ্ঠা উল্টিয়ে উল্টিয়ে পৃষ্ঠার ছবিগুলো দেখে যে আনন্দ পাওয়া যেত, এখন ফার্স্ট ক্লাস পেলেও নিজের মাঝে ঠিক সেরকম আনন্দ কাজ করে না।
পৃষ্ঠার ছবিগুলো দেখার পরেই বই মলাট করতাম। ঘরের পুরাতন ক্যালেন্ডার কিংবা সিমেন্টের ব্যাগের ভারী কাগজ মলাট করার কাজে ব্যবহৃত হতো। বছরের যে কোন সময় সিমেন্টের ব্যাগের ভেতরের ভারী কাগজ টুকু পেলেই রেখে দেয়া হতো, বই মলাট করার জন্য।
বই মলাট করেই রাখা হতো বালিশের নিচে। নতুন বছর, নতুন বই, নতুন মলাট। নিজের মাঝে একটা বড় নতুনত্ব কাজ করছিল সে সময়। এখন প্রতিনিয়তই হাজার টাকার নতুন বই কিনেও সেরকম অনুভূতি কাজ করে না আর!
মলাট করার পর আম্মুর হাত দিয়েই বইয়ে নাম লিখতাম। আম্মু সুন্দর করে নাম, স্কুলের নাম, শ্রেণী, রোল লিখে দিত। বইয়ে নাম না লিখলে বই হারিয়ে যাবে, ঠিক এরকম একটা ভয় কাজ করতো। কতই না স্বর্গীয় সময় ছিল আগের সে দিন গুলো।
নতুন বইয়ের ঘ্রাণ! নতুন বইয়ের প্রত্যেক পৃষ্ঠায় যেন এক অন্যরকম আনন্দ। নতুন বছরে নতুন বই, নতুন মলাট আবার মলাটের উপর বিদ্যালয়, নাম, শ্রেণী, রোল, নতুন ক্লাসরুম, নতুন স্কুল ড্রেস এই বিষয়গুলো অনেকটাই শান্তির ছিল।
আবার নতুন বছরে স্কুলে দু একজন করে নতুন বন্ধু ভর্তি হত। ওদের সাথে পরিচয় হবার বিষয়টাও কতই না সুন্দর ছিল! আসলে নতুন বছরের প্রথম দিনটা অনেকটা ঈদের আনন্দের মতই ছিল, যেগুলো জীবন থেকে কখনোই ভুলে যাবার মত নয়।