১লা জানু. ২০২৪ খ্রি.
সকাল দশটা এক মিনিট।
শুরুতেই নতুন বর্ষের ভালবাসা। ভালো আছো নিশ্চয়ই। আজকের এই দিনের শুরুতেই তোমাকে স্মরণ করছি। গতরাতেও করেছিলাম। তবে গত রাত আমার তেমন ভালো যায়নি। পত্রখানা তোমার হাতে গেলেই হয়তো তুমি তার কারণ জানতে চাবে, আমি তার প্রত্যুত্তর আগেই দিয়ে দিচ্ছি। ভালো না যাওয়ার বিশেষত কোনো কারণ আমার চোখে এখনো ধরা পড়ছে না। অতিরিক্ত সুখে থাকলে মানুষের দিনকাল কিছু কিছু সময় এমনিতেই খারাপ যায়। এটাও হতে পারে। তবে আমি এই বিষয়ে মোটেই নিশ্চিত নই।
আমাদের সবে মাত্র কয়েক মাস হয়েছে। বিশেষত পহেলা জানুয়ারিতে তোমাকে নিয়ে এবারই আমার প্রথম। এই দিনে আমার পক্ষ থেকে তোমাকে কি দেয়ার, বলো? তোমাকে ভালোবাসি বলা ছাড়া অন্য কিছু দেবার সাধ্য তো আমার নেই। আর এ পর্যায়ে সাধ্যের বাইরে যাবার সাধ্যও আমার জন্মায়নি এখন। তবু কি আর করার। “তোমাকে অনেক ভালোবাসি” এই বাক্যটাই আজকের দিনে তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে উপহার। ব্যস্…! তোমাকে দেয়ার এটুকুই যোগ্যতা আছে আমার। এর বাইরে আমার পক্ষে তেমন বড় কিছু দেবার আর কিছু নেই।
আচ্ছা দ্যাখো, ‘নতুন’ শব্দটা কতই না অদ্ভুত। চারদিকের সবাই নতুন নতুন করে ভাসছে। কিছুদিন পর আবার সেই নতুনের উদ্যম কমে যাবে। মানুষজন আবার পরের বছর নিজের মাঝে নতুনত্বের ছাপ রাঙিয়ে তুলবে। এটার নামই বুঝি পর্যায়ক্রম। মানুষ এভাবেই বাঁচে। আমাদের একসাথে থাকার বিষয়টা ঠিক সেরকম পর্যায়ক্রম হবে কিনা তা জানি না। তবে আমাদের নতুনত্ব যাতে কিছুতেই না কমে! প্রেম আসে, চলে যায়। মানুষজনও প্রেমকে গ্রহণ করে। আবার ত্যাগ করে। শেষে মানুষ আক্ষেপ করে যে তার প্রেমটা মিথ্যে ছিল। আসলে প্রেম কখনোই মিথ্যে হয় না, মিথ্যে হয় প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা। নতুন বছরে আমার পক্ষ থেকে আমাকে এবং তোমাকে আমাদের সবকিছুই শুদ্ধ করার আহ্বান।
তোমাকে আজকে কিছু কৈফিয়ত দেই। আসলে আমি আজকে আমার কৈফিয়ৎগুলো দিতেও বাধ্য। ক’দিন থেকে আমি ভালো নেই। ভালো না থাকার কারণ কি সেটাও জানিনা। আমি বুঝতেই পারছি না, আমাকে কি যেন একটা অস্তিত্বহীন করে দিচ্ছে! আমি দিন দিন খুব শূন্যতা অনুভব করছি। ইদানিং কারো সাথে আমার রাগ, ক্ষোভ, অভিমান হয় না। আমি আমার সমস্ত কিছুর জন্য আমাকেই দায়ী করছি। এসব কিছু ভালো হচ্ছে নাকি খারাপ হচ্ছে, সেই ভালো-মন্দ নির্ধারণ করার ক্ষমতাটুকু আমি হারিয়ে ফেলেছি। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রেই হয় কিনা জানিনা, তবে সত্যি সত্যি আমি ভালো নেই। আমার অন্য কারোর প্রতি কোন অভিযোগ নেই। আমার সমস্ত অভিযোগের সত্তা আজকাল ঠিক আমাকে ঘিরেই।
আমি প্রতিনিয়তই মনে মনে তোমাকে ডাকি। তুমি কি সেগুলো শুনতে পাও? পেলেও পেতে পারো হয়তো। এ বিষয়ে কিছু বলবো না তেমন আর। আমার কিছু স্বপ্ন আছে। ওগুলো আগেও ছিল। ওসব ভুল। আমি এখন ওদেরকে ‘স্বপ্ন’ নামে চিনিনা, ওদেরকে ‘ভুল’ নামে চিনি। ওরা আমাকে প্রতিনিয়তই কষ্ট দেয়। সমস্ত অভিমানের অস্তিত্ব ভুলে আমি ওদেরকে ত্যাগ করতে শিখেছি। এখন আমি স্বপ্ন বিহীন শক্তিকে নিয়ে উদ্দেশ্যহীন গন্তব্যে আছি!
ভালোবাসা বিষয়টাও আমার কাছে অন্যরকম। জীবনের এ পর্যায়ে এসেও ভালোবাসাকে ভালবাসতে কমতি রাখিনি। ভালোবাসা আমাকে ভালোবাসাচ্ছে। কিছুটা সান্ত্বনা দিচ্ছে। স্রষ্টার পক্ষ থেকে এটাই হয়তো আমার স্বাভাবিক বোধসম্পন্ন রাখার কৃপা। বছরের এই নতুন দিনে আমি স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞ। সাথে তোমার প্রতিও। আমার আত্মার গ্যালারির প্রত্যেক স্মৃতিগুলো কিছুটা অস্পষ্ট এখন। ওদেরকে ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না আর। এজন্যই মনে হয় আমি সবকিছুই ভুলতে বসছি এখন। আমি ভুলতে চাই না, কিন্তু অনুভূতি আমাকে মনে রাখতে দিচ্ছে না। এটাই হয়তো মনে রাখার শাস্তি!
আমার বাইরের কোলাহল গুলোকে আমি খুবই মিস করি এখন। ওরা নির্বিঘ্নে কোথায় যে লুকিয়ে আছে সেটা জানিনা। আমার থেকে ওদের দূরে সরে যাওয়াটা আমাকে কেমন জানি স্তব্ধ করে দিয়েছে। ওদের মুখরতা, কোলাহল, চাঞ্চল্যতা আমাকে একসময় মুগ্ধ করেছিল। আমি আগে বুঝতেই পারতাম না, ওরা আমার খুব আপন। আমার মাঝে সত্যি সত্যি ওরাই শুধু আপন ছিল। আর বাকি সব কি ছিল সেটার সঠিক সংজ্ঞা খুঁজতে আমার অনুভূতির অভিধান এই মুহূর্তে কাজ করছে না। আমি আমার পুরনো আমি’টাকে খুব মিস করছি। তবুও আমি হাসিমুখে থাকার চেষ্টা করছি! আচ্ছা, এখন বাদ দেই এসব। অনেক কিছুরই কৈফিয়ত দিলাম আজকে।
আমার বলার সেরকম কিছুই নেই আজকে। ভালো থেকো। দুপুরে ঠিকঠাক খেয়ে নিও। নতুন বছর যেন ভালো যায় ঠিক সে কামনা। নতুন বছর নিজেকে ঠিকঠাক মানিয়ে দেওয়ার আশীর্বাদ।
ভালো থেকো। নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
হ্যাপি নিউ ইয়ার!